আল-কায়েদার মাঝে এত ইখতিলাফ, সঠিক আল-কায়েদা কোনটা?!

প্রশ্ন:-

আলকায়েদা বলতে আসলে কি বোঝায়? এরা বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠীকে সাপোর্ট দেয় আর নিজেদের বলে দাবি করে। সিরিয়ায় এদের সমর্থিত একাধিক দল আছে। গোটা বিশ্বে এদের সমর্থিত দলের মধ্যে বহু এখতেলাফ ও পার্থক্য দেখা যায়। দলের মাঝেও যেমন বিভেদ তেমন শরয়ী মাসয়ালাতেও অনেক বিভেদ। যেমন তাকফিরের প্রয়োগ নিয়া কারো অবস্থান চরম এক্সট্রিম কারো অবস্থান হালকা। ভিসা কি আমান হবে কিনা সেটা নিয়েও অনেক এখতেলাফ আছে। এরদোগানের সাথে জোট করা নিয়ে দুই দল দুই ভাগ। বরং ৩ ভাগ হয়ে যায়। তাদের কেউ এরদোগানকে তাকফির করে। কেও আবার মন্দের ভালো হিসেবে এবার নির্বাচনের পর উচ্ছাস ও সমর্থন জানায়। তাহলে সঠিক আলকায়েদা কোনটা? কাদেরকে আলকায়েদার সহিহ ইমাম বলা হবে?

উত্তর:-

আলহামদুলিল্লাহি ওয়াহদাহ্ ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আ’লা মাল্লা নাবিয়্যাহ বা’দাহ। আ’ম্মা বা’দ-

 

আল-কায়েদা একটি দল, যার মাঝে রয়েছে বিভিন্ন মতাদর্শীর মুসলিমগণ। কেউ হানাফী, কেউ সালাফী,  কেউ বা আবার অন্য কোন মাঝহাবের লোক। পূর্বযুগের ইমামদের মাঝে যেমন ইখতিলাফ ছিল, তেমনিভাবে আল-কায়েদার অনুসারীদের মাঝেও ইখতিলাফি বিষয়ে ইখতিলাফ আছে, থাকবে; এটাই স্বাভাবিক। এর কারণ ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছি। তবে, কিছু বিষয়ে তারা সকলেই একমত, তা হলো- বর্তমানে জিহাদ ফরজে আইন, সারা বিশ্বে ক্বিতাল ফি সাবিলিল্লাহর মাধ্যমে খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে বিইযনিল্লাহ। আর, এ হিসাবেই তারা একটি দলের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে সমন্বিতভাবে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।

‘‘এরা বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠীকে সাপোর্ট দেয় আর নিজেদের বলে দাবি করে।’’ – আপনার এই কথাটি কিছুটা বিভ্রান্তিমূলক এবং অজ্ঞতাপূর্ণ মনে হচ্ছে। যাইহোক, এখানে মূল বিষয় হলো- আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে কেবল তখনই কোন আঞ্চলিক সংগঠনকে নিজেদের বলা হয়, যখন সেই আঞ্চলিক সংগঠনটির পক্ষ থেকে আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি বাইয়াত প্রদান করা হয়। আর, আল-কায়েদা কেবল ঐসকল সংগঠনকেই সামগ্রিকভাবে সাপোর্ট দেয় যাদের আক্বিদা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর আক্বিদা, যাদের মানহাজ সালাফদের মানহাজ। কিন্তু, এখানে আপনার কথায় আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই নীতিকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে এবং তাদের উপর অবিচারের মত মনে হয়েছে আমার কাছে। আর আল-কায়েদার সমর্থিত দল বলতে কী বুঝেছেন বা বুঝাতে চাচ্ছেন? আল-কায়েদার সমর্থিত দল বলতে বুঝানো হয়, যেসকল দল আল-কায়েদাকে সাপোর্ট করে, কিন্তু আল-কায়েদার কাছে বায়াতবদ্ধ না। এক্ষেত্রে,  আল-কায়েদার সমর্থিত দল অনেক আছে। যেমন- জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (পুরাতন)-ও আল-কায়েদাকে সাপোর্ট করে, কিন্তু তারা আল-কায়েদার কাছে বায়াতবদ্ধ না। তেমনিভাবে, ইরাকে আছে আনসার আল-ইসলাম, সিরিয়ায় অনেক তানজিম আছে যাদের সাথে আল-কায়েদার সাংগাঠনিক কোন সম্পর্ক নেই, কিন্তু তারা একে অপরকে সাহায্য করেন কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে।

‘‘গোটা বিশ্বে এদের সমর্থিত দলের মধ্যে বহু এখতেলাফ ও পার্থক্য দেখা যায়। দলের মাঝেও যেমন বিভেদ তেমন শরয়ী মাসয়ালাতেও অনেক বিভেদ। যেমন তাকফিরের প্রয়োগ নিয়া কারো অবস্থান চরম এক্সট্রিম কারো অবস্থান হালকা। ভিসা কি আমান হবে কিনা সেটা নিয়েও অনেক এখতেলাফ আছে।’’

আর আপনার এসকল কথার জবাব আমি পূর্বেই দিয়েছি, যেসকল বিষয়ে ইখতিলাফ বিদ্যমান, সেসকল বিষয়ে আল-কায়েদার কর্মী-সমর্থকদের মাঝেও ইখতিলাফ থাকতে পারে, আছে। আল-কায়েদা তাকফিরের উপর ভিত্তি করে জিহাদ করে না। ভিসা আমান হবে কি না এটাও ইখতেলাফি বিষয়। [উল্লেখ্য: আমি আপনার দাবি স্বীকার করে নিচ্ছি না যে, আল-কায়েদার বিভিন্ন শাখার মাঝে ভিসা আমান কি না এ বিষয়ে ইখতিলাফ আছে, কেননা আমার এই বিষয়ে সবার তথ্য জানা নেই। যদি আপনার জানা থাকে আমাদেরকে শেয়ার করতে পারেন ইনশাআল্লাহ। ]

 

‘‘এরদোগানের সাথে জোট করা নিয়ে দুই দল দুই ভাগ। বরং ৩ ভাগ হয়ে যায়। তাদের কেও এরদোগানকে তাকফির করে। কেও আবার মন্দের ভালো হিসেবে এবার নির্বাচনের পর উচ্ছাস ও সমর্থন জানায়।’’

এখানে আপনার দেওয়া তথ্য ‍আমাদের জানা নেই। আপনার কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনার দাবিগুলোর ব্যাপারে আমাদেরকে বিশদ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন ইনশাআল্লাহ। তবে, আপনার কথা অনুযায়ী বুঝা যায়- আপনি তারিরুশ শামকে আল-কায়েদার শাখা হিসেবে বিবেচনা করছেন, বা তাহরিরুশ শামের কোন কাজকে আল-কায়েদার উপর চাপাতে চেষ্টা করতেছেন। এখানে বলবো- তাহরিরুশ শাম আল-কায়েদার বায়াত ভঙ্গ করেছে (সবাই না, ‍যারা বায়াত ভঙ্গ করেননি তারা নতুনভাবে তাহরিরুশ শাম থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে হুররাস আদ-দ্বীন নামে একটি দল গঠন করেছেন। সিরিয়াতে এখন আল-কায়েদার শাখা হিসেবে এটাই পরিচিত।]

আর, আল-কায়েদার সংজ্ঞাটা পূর্বেই বলেছি।

সবশেষে বলবো, আপনার কথার ভাবভঙ্গিমায় যেটা লক্ষ্য করা গিয়েছে তা হলো- আপনি আল-কায়েদাকে অভ্যন্তরীণভাবে বিশৃঙ্খল একটি দল হিসেবে উপস্থাপন করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন, যা আদৌ কাম্য নয়। বিভিন্ন বিষয়ে উম্মাহর মাঝে প্রথম থেকেই ইখতিলাফ বিদ্যমান, এটা কোন সময়ই পরস্পরের সম্পর্কের অবনতির কারণ হতে পারে না। তবে, যারা এই ইখতিলাফকে কেন্দ্র করে উম্মাহর মাঝে বিচ্ছিন্ন মতবাদ প্রচার করতে চায়, আমরা কখনোই তাদের সমর্থন করি না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়াতের উপর অটল রাখুন । আমীন। আশা করি আপনার সকল প্রশ্নের যথোচিত জবাব পেয়েছেন।

ওয়ালহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।

Leave a comment

Create a free website or blog at WordPress.com.

Up ↑

Design a site like this with WordPress.com
Get started