ফেসবুকে দ্বীনী গ্রুপ পরিচালনাকারী ও তার সদস্যবৃন্দের প্রতি কিছু কথা!

আলহামদুলিল্লাহি ওয়াহদাহ্ ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আ’লা মাল্লা নাবিয়্যা বা’দাহ। অতঃপর-

‘হিদায়াহ’ গ্রুপে হিদায়াতের সন্ধানে আসা সকল সদস্য ও এডমিনদের, বিশেষভাবে তানজিম ক্বায়েদাতুল জিহাদের অনুসারী ও সমর্থক ভাইদের উদ্দেশ্যে সংক্ষেপে কিছু কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করছি। বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত হলো এই গ্রুপে যোগদান করেছি। একভাইয়ের, খুব সম্ভবত Mohammad Abdus Salam Faraj ভাইয়ের পোস্টের কমেন্টে, এক ভাই (শেখ সা’দী/সাদিদ মালেক ভাই) সম্ভবত এই গ্রুপের সন্ধান দেন প্রথমে! বলা হয়- এখানে একদল সত্যসন্ধানী উলামায়ে কেরাম দলিলভিত্তিকভাবে কথিত তাকফিরি ভাইদের বিভিন্ন ভ্রান্ত মতবাদের জবাব দেন। তো, যেখানেই দলিলভিত্তিক বিতর্ক, সেখানেই আমার উপস্থিতি থাকাটা কাম্য বলে মনে করি। কেননা, আমি দ্বন্দ্বমূলক বিষয়ের সমাধানকে পছন্দ করি, ভালোবাসি সীসাঢালা প্রাচীর হয়ে রবের মাহবুব বান্দায় পরিণত হতে। কিন্তু, দলিলভিত্তিক বিতর্কের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ঘৃণা, বিদ্বেষ, হিংসার মত জঘন্য বিষয়ই যে এখানে প্রাধ্যান্য পাবে তা জানা ছিল না। সত্য গ্রহণ করার মানসিকতাও যে কারো কারো মাঝে নেই সে বিষয়টিও মর্মাহত করেছে! মিথ্যাচারের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে, মানসিকভাবে আমি আহত হয়েছি! আমার মনে হয়েছে, যদি হার্টের রোগে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি নিজের সম্পর্কে এমন মিথ্যাচার শুনে, তাহলে তার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যাইহোক, বিষয়টি হাস্যকরের মত মনে হলেও এটাই বাস্তবতা! কখনো দেখা গেছে কমেন্টে উত্তর প্রত্যাশীরা কাঙ্খিত উত্তর পাননি, তাদেরকে উত্তর দেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়নি! অথচ, পরবর্তীতে ঠিকই আবার একই বিষয় নিয়ে কথা বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। এসকল অভিযোগে কাউকে নির্দিষ্টভাবে অভিযুক্ত করতে চাই না, বরং গ্রুপে আলোচনাকারীদের উভয় পক্ষেই এই বিষয়ে কম-বেশি বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে, এসকল বিষয়ে আমার কাছে সবচেয়ে আশ্চর্য লেগেছে, মিথ্যাচার করার ব্যাপারে এডমিনদের নিরবতার বিষয়টি! গ্রুপে মিথ্যাচার করা হচ্ছে, অথচ গ্রুপ পরিচালক হয়েও ওনাদেরকে এ ব্যাপারে তেমন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি! মুহতারাম এডমিনগণের নিকট আমার প্রশ্ন- যদি গ্রুপে নগ্নতা ছড়ানো হতো, তবুও কি আপনারা চুপ করে থাকতেন!? কারো ব্যাপারে দলিলবিহীন মিথ্যাচার কি নগ্নতার ভয়াবহতা থেকেও কম কিছু!!? আপনারা হয়তো বলবেন, সে ব্যাপারে আপনাদেরকে রিপোর্ট দিতে, তা তো দেওয়ার ইখতিয়ার সদস্যদের! কিন্তু, আপনাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে, তাই নয় কি ভাইগণ? আপনারা কি গ্রুপে একটিবারও নজর দেন না? অথচ, ঠিকই Md. Tahfiz Hasan নামে একজন আলেমে দ্বীনকে গ্রুপ থেকে ব্যান করেছেন। তার দ্বারা বুঝা যায়, আপনারা নজর দেন ঠিকই, কিন্তু গ্রুপের ‘মূলধারা’ ভাইদের দোষগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনাদের নজর এড়িয়ে যায়! কথাগুলো শুনতে খারাপ শুনালেও সত্য। কিন্তু, আমি এও বলছি না যে, গ্রুপের ‘আল-কায়েদার সমর্থক’’ ভাইয়েরা খারাপ আচরণ করেননি! তারাও করেছেন। যাইহোক, এসকল বিষয়কে সামনে রেখেই আমি প্রথমে গ্রুপের ‘আল-কায়েদার সমর্থক’ ভাইদের প্রতি এবং পরে এডমিন ভাইদের প্রতি কিছু আবেদন করবো ইনশাআল্লাহ। যদি উপযুক্ত মনে হয়, তবে নসিহা হিসেবেও নিতে পারেন কথাগুলোকে!

আল-কায়েদার সমর্থক ভাইদের প্রতি কিছু কথা-

প্রিয় ভাইয়েরা! আমি আপনাদেরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি, ভালোবাসি তাঁর দ্বীনের প্রতি আপনাদের ভালোবাসা থাকার কারণে। দ্বীনের খেদমতে আমরা নিজেদেরকে বিলীন করে দেওয়ার নিয়ত করেছি, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু, আমাদের কোন কাজ যদি দ্বীনের জন্য উপকারী না হয়ে অপকারী হয়ে যায়, তখন সেটা বিশাল ক্ষতি বয়ে আনতে পারে ভাই! আমি যে কথাটি বলতে চাচ্ছি ভাইয়েরা তা হলো- এই গ্রুপে আমাদের উদ্দেশ্য আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করা, তাওহীদ ও জিহাদের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া, আমাদের ব্যাপারে ছড়ানো মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান তুলে ধরা। এর জন্য যত উত্তম পন্থা অবলম্বন করা দরকার আমাদেরকে করতে হবে ভাই ইনশাআল্লাহ। কিন্তু, এ কাজগুলো করার জন্য বিদ্বেষীদের বিদ্বেষমূলক কথার জবাবে আমাদেরও বিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ করার কোন শরয়ী যৌক্তিকতা দেখি না(ভুল হলে শোধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ উত্তমভাবে)। অযথা গালাগালিতে দ্বীনের সামান্যতম উপকারও হবে বলে আমার মনে হয় না ভাইয়েরা! বরং, নিজেদের রাগ-অভিমানকেই হয়তো একটু কমাতে পারবেন! বিদ্বেষপোষণকারী কোন পোস্টের কমেন্ট বক্সেও তাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করবেন না ভাইয়েরা! বরং, উত্তম পন্থায় তাদের ভ্রান্ত দাবিগুলোর বিরুদ্ধে একটি নতুন পোস্ট করলেই অধিক ফায়দাজনক হবে বলে মনে হয় ইনশাআল্লাহ। পরবর্তীতে, একই লেখা বা প্রয়োজন অনুযায়ী আরেকটু সম্পাদিত করে অন্যান্য জায়গায় তাদের একই বিভ্রান্তির ব্যাপারে জবাব দেওয়া যায় ইনশাআল্লাহ। কী দরকার আছে ভাই, কাউকে গালি দেওয়ার?! কী দরকার আছে মূর্খদের সাথে তর্কে লিপ্ত হওয়ার?!  কী দরকার আছে ভাই কারো সাথে অযথাই কথা বলার? যদিও আপনি তাকে কোন বিষয়ে নাস্তানাবুদ বানিয়ে ফেলতে পারবেন, তবুও আপনার উচিত নয় প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলা। প্রয়োজনের অতিরিক্ত তার বিভ্রান্তি নিয়ে মাতামাতি করারও কোন কারণ নেই ভাই। তবে হ্যা, যদি কেউ বাস্তবিকপক্ষেই সত্যানুসন্ধানী হয়, তাকে সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতা করা আমাদের কর্তব্য বলে বিবেচনা করি।

আরেকটি অনুরোধ ভাই আপনাদের প্রতি, ভাই! আপনারা কেন যে এমন বিষয়ে আলোচনা করেন যে বিষয়ে তানজিমের পক্ষ থেকে নিরব থাকা হয়, তা আমার বুঝে আসে না ভাইয়েরা। যেসকল ভাইয়েরা আল-কায়েদার অনুসারী দাবি করেন তাদের অবশ্যই উচিত আল-কায়েদার আচরণবিধি’ বইটি পড়ে তা পুঙ্খানোপুঙ্খ অনুসরণ করে চলা। ভাইয়েরা! ফেসবুকে আপনারা হয়তো দ্বীনের অনেক খেদমত করছেন, আবার এমন কিছু কাজও করছেন যা পূর্বের খেদমতের ফলাফলকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। উলামায়ে কেরামের ব্যাপারে বিশেষভাবে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখবেন, আল-কায়েদার অফিসিয়াল সাইটগুলোতে এ বিষয়ে কী ধরণের আলোচনা হয়েছে, সে অনুপাতে আলোচনা করার অনুরোধ থাকবে আপনাদের প্রতি। সম্মানিত আলেমদেরকে বিভিন্ন নিকৃষ্ট ট্যাগ লাগানো আদৌ আল-কায়েদার পক্ষ থেকে কখনো করা  হয়নি। বরং, আল-কায়েদা এই কথায় বিশ্বাস করে যে, ‘‘সম্মান সম্মানের জায়গায়, হক্ব হক্বের জায়গায়’’ ।  তাই, যদি কোন আলেমের সমালোচনা করতে হয়, তার যথাযোগ্য সম্মান বজায় রেখে গঠনমূলক আলোচনা করবেন বলে আশা করি ইনশাআল্লাহ। অযথা, এক দুই-লাইনের পোস্ট করে, আলেমদের সমালোচনা করাকে আমি ফেতনা ছড়ানো বলে মনে করি। কেননা, এর দ্বারা আপনি যত ভালো শব্দই ব্যবহার করেন না কেন, বিদ্বেষীরা বিদ্বেষমূলক কথা বলার সুযোগ পেয়ে যায়। তারা আপনার পোস্টের কমেন্টে অসৌজন্যমূলক কথা বলতে দ্বিধা করবে না। তাই, আপনাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে- আল-কায়েদার অনুসারী হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্বায়েদাতুল জিহাদের ‘আচরণবিধি’ মেনে চলুন ইনশাআল্লাহ। না হয়, আপনার দায়িত্ব আপনার কাঁধে।

 

মুহতারাম এডমিন ভাইগণ! এবারে আপনাদের প্রতি কিছু কথা-

আসলে ‘হিদায়াহ’ গ্রুপটাতে আপনাদের নিয়মাবলি খুব ভালো। তবে, এপ্রোভাল সিস্টেম না থাকাতে, আপনাদের উপর দায়িত্বটা একটু বেশি। গ্রুপে যদি কোন নগ্ন ছবি/ অশ্লীল লেখা পোস্ট করা হয়, সেটা যেভাবে ডিলেট করে দেওয়া এবং পোস্টকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আপনাদের কর্তব্য হয়ে যায়, ঠিক তেমনি আরেকজনের ব্যাপারে মিথ্যাচার করা এবং দলিলবিহীন অপবাদ আরোপ করার ব্যাপারেও আপনাদের কর্তব্য ঐ পোস্টগুলো ডিলেট করে দেওয়া এবং পোস্টকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া; এখন যেই এই পোস্ট করুক না কেন। আমার মনে হয়, যদি আপনারা গ্রুপটাকে গালিগালাজ, বিদ্বেষ, মিথ্যাচার ইত্যাদি মুক্ত রাখতে পারেন, তাহলে এটা হয়ে ওঠতে পারে অনলাইনে দাওয়াতের এক গুরুত্বপূর্ণ মারকাজ! আর আপনারা যে দলেরই হোন না কেন, আপনাদের উচিত গ্রুপটা নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করা( আপনাদের বেশিরভাগ কাজ নিরপেক্ষ পেয়েছি, তবে কিছু ক্ষেত্রে বিচ্যুতি ঘটেছে যা পূর্বে উল্লেখ করেছি। আশা করি সেগুলোও শোধরিয়ে নিবেন ইনশাআল্লাহ। সবার ক্ষেত্রে এক নিয়ম পালনে সচেষ্ট থাকবেন ইনশাআল্লাহ।)

আর যদি আপনারা এই গ্রুপটাকে নিরপেক্ষভাবে, বিদ্বেষ, গালিগালাজ, মিথ্যাচারমুক্ত না রাখতে পারেন তাহলে আমরা এই গ্রুপ থেকে লিভ নিবো ইনশাআল্লাহ। বিশেষভাবে, আমি অবশ্যই নিবো ইনশাআল্লাহ(যদিও হয়তো এতে কারো কিছু যায় আসবে না) । যাইহোক, আল-কায়েদার অনুসারী ভাইগণসহ সকল ভাইদের প্রতিই আমার আবেদন থাকবে, যদি  এই গ্রুপে মিথ্যাচার, বিদ্বেষ, গালিগালাজ মুক্ত না রাখা যায় তবে সকলেই যেন লিভ নেন এই গ্রুপ থেকে ইনশাআল্লাহ। আর, যদি দাবি পূরণ করা হয় তাহলে আমরা নতুনভাবে দ্বীনের দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত হবো ইনশাআল্লাহ।

সর্বশেষে, আমার কথায় যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, আল্লাহর জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যদি পরামর্শগুলো ভালো লেগে থাকে গ্রহণ করবেন আশা করি ইনশাআল্লাহ্ ।

ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

Leave a comment

Blog at WordPress.com.

Up ↑

Design a site like this with WordPress.com
Get started